Header Ads Widget

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম: যাঁকে ভালবাসা ছাড়া মুমিন হওয়া যায় না

 


ঈমানের এক গুরুত্বপূর্ণ শাখা, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত। অথাৎ একজন মুমিনকে যেসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হয় এবং যা ছাড়া কেউ মুমিন হতে পারে না- নবীর প্রতি ভালবাসা অন্যতম। হাদীস শরীফে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—

لا يؤمن أحدكم، حتى أكون أحب إليه من والده وولده والناس أجمعين.

তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হবে না, যতক্ষণ আমি তার কাছে তার বাবা, তার সন্তান ও সকল মানুষের চেয়ে প্রিয় না হব। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৪ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালবাসা একটি মানদণ্ড, এই মানদণ্ডের দ্বারা প্রত্যেকে নিজ নিজ ঈমান যাচাই করে নিতে পারেন। অন্তরে যদি তাঁর প্রতি মহব্বত ও ভালবাসা অনুভব করেন তাহলে আনন্দিত হোন; আল্লাহ তাআলা আপনাকে ঈমানের একটি বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। অন্যথায় নিজের ব্যাপারে সতর্ক হোন; এখনও সতর্ক হওয়ার ও সংশোধন হওয়ার সময় আছে।

মুমিন কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে না ভালবেসে পারে? যাঁর মাধ্যমে মানবজাতি পেল ঈমান ও কুরআনের মতো মহাসম্পদ, লাভ করল মুমিন হওয়ার মহাসৌভাগ্য, যিনি আমাদের দেখালেন ইহকাল-পরকালের শান্তির পথ, সেই পথ দেখাতে গিয়ে যাঁর রক্ত ঝরল, দান্দান মোবারক শহীদ হল, এরপরও আল্লাহর দরবারে উম্মতের নাজাত ও হেদায়েত প্রার্থনা করে অশ্রু ঝরালেন— তাঁকে তো ভালবাসতেই হবে।

যিনি মানুষকে দিলেন মনুষ্যত্বের পাঠ, মাটির মানুষকে পরিচিত করলেন তার আসমানী মর্যাদার সাথে, তার সামনে উন্মুক্ত করলেন বিশ্বাস ও কর্মের এক উন্নত জগৎ, উন্মোচিত করলেন প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে বিশ্বাস ও চেতনার, চরিত্র ও নৈতিকতার আকাশসম উচ্চতায় উড্ডয়নের সুপ্ত সম্ভাবনার দুয়ার। এককথায় যিনি মানবকে দেখালেন তার মানব-জন্ম সার্থক হওয়ার পথ— তাঁকে তো ভালবাসতেই হবে। তাঁকে ভালবাসা ছাড়া ও তাঁর অপরিশোধ্য ঋণ স্বীকার করা ছাড়া আমরা সভ্য মানুষ কীভাবে হব? ঈমান আমাদের সভ্য-সুশীল মানুষ হওয়ার শিক্ষা দান করে। ঈমান আমাদের ঐসকল গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে বলে, যা ছাড়া কেউ সভ্য-সজ্জন হতে পারে না, সর্বাঙ্গসুন্দর হতে পারে না। আর একারণেই ঈমানের শিক্ষা বিস্তারের আজ অতি প্রয়োজন।

ঈমানের শিক্ষায় মানুষ পরিশুদ্ধ হয়, পরিশীলিত হয়। তার চিন্তা-ভাবনা, আবেগ-অনুভূতি, উদ্যম-উদ্দীপনা সঠিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তার যোগ্যতা ও সক্ষমতা তাকে সঠিক গন্তব্যের দিকে পরিচালিত করে।

মানুষের আবেগ-অনুভূতিও তার এক শক্তি। এই শক্তি সঠিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলে এর দ্বারা ‘অসাধ্য সাধন হতে পারে । অন্যদিকে ভুল ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ সমাজকে অবক্ষয়-অরাজকতার নরকে পরিণত করতে পারে। ইসলামের শিক্ষার যথার্থতা যে, , ইসলাম মানুষের আবেগ-অনুভূতির সঠিক ক্ষেত্র নির্দেশ করেছে। কোথায় ব্যবহৃত হবে অনুরাগ-ভালবাসার শক্তি, আর কোথায় বিরাগ-বিদ্বেষের শক্তি- কুরআন-সুন্নাহয় তার পরিষ্কার নির্দেশনা আছে। সেই নির্দেশনার সারনিয়ার্স নিম্নোক্ত হাদীসটি—

من أحب الله، وأبغض لله، وأعطى الله، ومنع لله فقد استكمل الإيمان.

যে আল্লাহর জন্য ভালবাসে, আল্লাহর জন্য বিদ্বেষ পোষণ করে, আল্লাহর জন্য দেয়, দেয়া থেকে বিরত থাকে- তার ঈমান পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬৮১

এই হাদীস শরীফ আমাদের জানাচ্ছে যে, কর্মের ক্ষেত্রে যেমন আমাদের স্বাধীন-স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ নেই, তেমনি নেই আবেগ-অনুভূতি ও অনুরাগ-বিরাগের ক্ষেত্রেও। মুমিনের ভালবাসাও হবে আল্লাহর জন্য, বিদ্বেষও আল্লাহর জন্য। আর তাহলেই বিদ্বেষ-ভালবাসার মতো দুটি মানবীয় বৃত্তিও হয়ে যাবে ঈমানের পূর্ণতার উপায়। চিন্তাশীল যে কেউ শান্ত মনে চিন্তা-ভাবনা করলে ইসলামের এই শিক্ষার যথার্থতা উপলব্ধি করতে পারবেন। আজকের মানব-সমাজের অবক্ষয়-অনৈতিকতার এক বড় অংশই কি নয়- মানবের অনুরাগ-বৃত্তির বিপথগামিতাঁর ফল? তেমনি সমাজের হানাহানি, জুলুম-অবিচারেরও এক বড় অংশ কি নয়- মানবের আর আল্লাহর জন্য এজন্য কুরআনে কারীমে [ সূরা ফুরকান (২৫) : ৭২] 

আল্লাহর নেক বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে এ কথাও বলা হয়েছে- والذين لا يشهدون الزور. অর্থাৎ তারা এমন মানুষ, যারা মিথ্যা ধ্যান-ধারণার ভিত্তিতে উদযাপিত কাফের-মুশরিকদের উৎসবে অংশগ্রহণ করে না। (উল্লেখিত আয়াতাংশের আয়াতাংশের তাফসীর জানার জন্য দেখুন- তাফসীরে ইবনে   কাসীর খ. ৬ পৃ. ১৪০ ও আদ্দুররুল মানসূর খ. ৫ পৃ. ৮০-৮১ এবং ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.-এর কিতাব ‘ইকতিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম মুখালাফাতা আসহাবিল জাহীম’ খ. ১ পৃ. ৪২৭-৪৩২) আরেক হাদীসে এই ঘটনা বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় একজন মান্নত করল, অমুক জায়গায় সে উট জবাই করবে। সে আল্লাহর রাসূলের নিকট মাসআলা জানতে চাইলে আল্লাহর রাসূল জিজ্ঞেস করলেন- 

هل كان فيها وثن من أوثان الجاهلية يعبد؟ هل كان فيها عبد من أعيادهم؟ 

সেখানে কি জাহেলী যুগের কোনো মূর্তি : ছিল, যার পূজা করা হত? লোকেরা বলল, না। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন- সেখানে কি অমুসলিমদের কোনো উৎসব হত? লোকেরা বলল, না। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

أوف بنذرك، فإنه لا وفاء لنذر ف 

... তুমি তোমার মান্নত পুরা কর। (এরপর বললেন, এসব প্রশ্ন এজন্য করা হয়েছে) কারণ, আল্লাহর নাফরমানিতে কোনো মান্নত গ্রহণযোগ্য নয়; এ ধরনের মান্নত পূরণ করা জায়েয নয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৩১৩, অধ্যায় : মা ইয়ু'মারু বিওয়াফাইহী মিনান নাযরি সাহাবায়ে কেরাম কুরআন-হাদীসের হেদায়েত ও নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন। এজন্য তাঁরা মানুষকে অমুসলিমদের উৎসবে যেতে অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষেধ করতেন।

Releted Post: আরওঃ


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ