🔴মিসত্তয়াক সংক্রান্ত আলোচনা
মিসওয়াকের ফযিলত
১. মিসত্তয়াক করে নামায পড়লে সেই নামায মিসত্তয়াক ছাড়া নামাযের চেয়ে ৭০গুন বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।
২. মিসত্তয়াক করে নামায পড়লে সেই নামাযের সওয়াব নিরানব্বই বা চারশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।
৩. আল্লাহ্ তা'আলায়র সন্তুষ্টি অর্জন হয়।
৪. মউতের সময় কালিমা নসীব হয়।
৫. নিয়মিত মিসত্তয়াক করলে স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পায়।
৬. জীবিকা নির্বাহ সহজ হয়।
৭. মুখ পরিষ্কার হয়।
৮. দাঁতের মাড়ি মজবুত হয়।
৯. মাথা ব্যথা ও মাথার বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
১০. কোন স্থির রগ নড়াচড়া করে না এবং নড়ার রগ স্থির হয় না।
১১. কফ দূর হয়।
১২. দাঁত শক্ত হয়।
১৩. দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকে ও তীক্ষ্ণ করে।
১৪. পাকস্থলী সুস্থ থাকে ও পরিষ্কার হয়
১৫. কথা স্পষ্ট হয়, বাকপটুতা, মুখস্থশক্তি ও জ্ঞানশক্তি বৃদ্ধি পায়।
১৬. অন্তর পবিত্র হয়।
১৭. নেকি বেড়ে যায় ।
১৮.ফেরেশতাগণ খুশী হয়।
১৯. চেহারার জ্যোতির কারণে ফেরেশতাগণ তার সাথে মোছাফাহা করেন।
২০. মসজিদ থেকে বের হলে ফেরেশতাগণ তার পিছনে চলেন।
২১. নবী-রাসূলগণ তার জন্য ক্ষমার দু'আ করেন।
২২. শয়তান অসন্তুষ্ট হয় ও বিতাড়িত হয়।
২৩. খাবার হজম হয়।
২৪. অধিক সন্তান লাভ হয়।
২৫. বার্ধক্য বিলম্বে আসে।
২৬. পিঠ মজবুত হয়।
২৭. দাঁত সাদা হয়।
২৮. মুখে সুঘ্রাণ হয়।
২৯. মিসত্তয়াক করলে পেটের রোগ দূর হয়।
৩০. কন্ঠ পরিষ্কার হয়।
৩১. জিহ্বা পরিষ্কার হয়।
৩২. বুদ্ধি তীক্ষ্ণ করে।
৩৩. প্রয়োজন পুরা হতে সাহায্য করে।
৩৪. যারা মিসত্তয়াক করে না তাদের সওয়াব তার আমল নামায় লেখা হয়
৩৫. মিসত্তয়াক করার দ্বারা বীর্য গাঢ় হয়।
🔴মিসত্তয়াক কেমন হওয়া সুন্নাত
""""""''""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
১. মিসত্তয়াক যয়তুন গাছের ডাল হওয়া উত্তম- যা সাধারণত আমাদের দেশে মিসত্তয়াক হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়। অন্যান্য গাছের ডাল দ্বারাও মিওয়াক বানানো যায়।
২. মিসত্তয়াক অর্ধহাত পরিমাণ লম্বা হওয়া এবং আঙুলের চেয়ে মোটা না হওয়া। (বাহরুর রায়েক)
🔴মিসত্তয়াক ধরার সুন্নাত তরীকা
--------------------------------
১. মিসত্তয়াক ধরার সুন্নাত হলো, ডানহাতের কনিষ্ঠা আঙুল মিসওয়াকের নিচে রাখবে আর বৃদ্ধাঙুলি মাথার চেয়ে একটু নিচে রাখবে। অবশিষ্ট মিসত্তয়াকের উপর রাখবে। (ফতোয়ায়ে শামী ১/১১৪ পৃষ্ঠা)
২.হাতের মুঠের মধ্যে রেখে মিসত্তয়াক করা নিষেধ। এতে অর্শ্বরোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ডানহাতে মিসত্তয়াক করবে। বামহাত দ্বারা মিসত্তয়াক করা শয়তানের কাজ । (ফাজায়েলে মিসত্তয়াক, পৃ. ৮১)
🔴মিসত্তয়াকের সুন্নাতসমূহ
_________________________
১. প্রথমে উপরের ডানপাশের মাড়ির দাঁত থেকে মিসত্তয়াক শুরু করতে হবে। তারপর উপরের বামপাশের মাড়ির দাঁত মিসত্তয়াক করতে হবে। এরপর নিচের দাঁতগুলোতে মিওয়াক করতে হবে। এভাবে প্রথমে একবার শুরু করবে। তারপর যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে মিস্ওয়াক করবে।
২. প্রত্যেকবার মিসত্তয়াক পানিতে ভিজিয়ে নেয়া সুন্নাত।
৩. দাঁতের প্রস্থেও মিসত্তয়াক করা যাবে।
৪. দাঁতের বাইরে ও ভিতরের দিক মিসত্তয়াক করবে এবং জিহ্বার দৈর্ঘ্যেওমিসত্তয়াক করবে।
৫. কখনো গাছের ডাল উপস্থিত না থাকলে হাতের আঙুল দ্বারা মিসত্তয়াক করবে।
৬. প্রতিবার অযুর পূর্বে মিসত্তয়াক করা সুন্নাত।
৭. মিসত্তয়াক করার সময় এই নিয়ত করা যে, আমি নামাযে আল্লাহর যিকির করার জন্য বা কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার জন্য আমার মুখ পবিত্র করছি।
৮. মিসত্তয়াক করার সময় এই দু'আ পড়া-
بسم الله اللهم اجعل سواكني هذا محيطا لذنوبي و مرضاة لك و بيض به وجهي كمابيضت أسناني -
🔴মিসত্তয়াক করার মুস্তাহাব সময়
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""''''"""""
১. নিদ্ৰা থেকে জাগ্রত হওয়ার পর।
২. অযু করার সময়।
৩. কুরআন তিলাওয়াতের সময়।
৪.হাদিস শরীফ পড়া ও পড়ানোর সময়।
৫. নামাযে দাঁড়ানোর সময় (যদি অযু অনেক আগে করে থাকে)
৬. কা'বাগৃহে বা হাতীমে কা’বায় প্রবেশকালে ।
৭. আল্লাহর যিকির করার পূর্বে।
৮. কোন দীনি মজলিসে যাওয়ার পূর্বে।
৯. ঘরে প্রবেশের পরে।
১০. স্ত্রী সহবাসের পূর্বে।
১১. ক্ষুধার্ত বা পিপাসিত হলে
১২. সফরে যাওয়ার পূর্বে।
১৩. সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের পরে।
১৪. খানা খাওয়ার পূর্বে।
১৫. নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে।
১৬. সেহরী খাওয়ার সময়।
১৭. মৃত্যুর চিহ্ন ফুটে উঠার পূর্বে।
🔴মিসত্তয়াকের আদবসমূহ
""""""""""""""""""""""""""""""""""
১. মিসত্তয়াক খুব বেশি নরম হবে না এবং খুব বেশি শক্তও হবে না। বরং মধ্যম ধরনের হওয়া উচিত।
২. মিসওয়াকের ডাল পরিষ্কার ও সোজা হওয়া গিরাবিশিষ্ট না হওয়া উত্তম।
৩. কনিষ্ঠা আঙুলের মত মোটা হওয়া মুস্তাহাব।
৪. চিৎ হয়ে শুয়ে মিসত্তয়াক করা মাকরূহ।
৫. মিসত্তয়াক প্রথমে এক বিঘত লম্বা হবে। পরবর্তীতে কমে গেলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু এক বিঘতের চেয়ে বেশি লম্বা হলে শয়তান তার উপর সওয়ার হয়।
৬. মিসত্তয়াক চুষা ঠিক নয়।
৭. মিসত্তয়াক ব্যবহারের আগে ভিজিয়ে নেয়া উচিত। এমনিভাবে ব্যবহার করার পরেও ধুয়ে রাখা। অন্যথায় শয়তান ব্যবহার করে।
৮. মিসত্তয়াক খাড়া করে রাখবে। জমিনে ফেলে রাখা ঠিক
নয় ।
৯. বাথরুমে মিসত্তয়াক করা মাকরূহ। তবে গোসলখানা, অযুখানা ও বাথরুম একত্রে হলে বাথরুমে না দাঁড়িয়ে পাশে সরে এসে মিসত্তয়াক করে নিবে।
১০. মিওয়াকের দুই দিক থেকে ব্যবহার করা ঠিক নয়।
১১. মসজিদের ভিতরে মিস্ওয়াক করা বৈধ। তবে “বজলুল মাজহুদ” নামক কিতাবে এসেছে যে, মসজিদে মিওয়াক করা সমীচীন নয়। কেননা, মিসত্তয়াক দ্বারা দাঁতের ময়লা দূর করা হয় আর মসজিদ ময়লা দূর করার স্থান নয়
১২. অপরিচিত গাছের ডাল দ্বারা মিস্ওয়াক বানানো ঠিক নয়। অনেক সময় ডাল বিষাক্ত হওয়ার কারণে ঐ ডাল দ্বারা মিসত্তয়াক করার কারণে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। (ফাজায়েলে মিস্ওয়াক, পৃ, ৮৮)
(সাধারণত মহিলাগণকে সুন্নাত তরীকায় মিসওয়াক ব্যবহার করতে দেখা যায় না। অথচ মিসওয়াকের গুরুত্ব ও ফযীলত পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।)
0 মন্তব্যসমূহ